মনু নদীর কুলে বল সুন্দরী চাষে ভাগ্য বদলেছে গিয়াস উদ্দিনের

মনু নদীর কুলে বল সুন্দরী চাষে ভাগ্য বদলেছে গিয়াস উদ্দিনের

রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে আব্দুল আজিজ : মৌলভীবাজারের রাজনগরে বল সুন্দরী, টক মিষ্টি ও আপেল কুল চাষ করে এলাকায় চমক লাগিয়েছেন সাবেক বিজিবি সদস্য এনজিও কর্মী গিয়াস উদ্দিন। গিয়াস মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের একামধু গ্রামের বাসিন্দা।

এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মনু নদী। নদীর কুলে এক বিঘা জমিতে ২০২১ সালে ২’শ গাছ দিয়ে শুরু করে প্রথম বারেই তিনি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ করেন। বর্তমানে ৩ বিঘা জমিতে রয়েছে তার কুল বাগান। গত ২ বছর ভালো ফলন না হলেও চলতি মৌসুমে বাগান কুলে ভরপুর রয়েছে। 

গিয়াস উদ্দিনের কুল বাগানে এক একটি গাছ ৫ থেকে ৬ হাত লম্বা। গাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত থোকায় থোকায় ঝুলছে বল সুন্দরী, টক-মিষ্টি জাতের আপেল কুল। উপরের অংশে লালচে রং থাকায় স্থানীয়রা একে নাম দিয়েছেন বল সুন্দরী। ফলটি আকারেও বড়। দেখতে অনেকটা আপেলের মতো। খেতেও আপেলের স্বাদ পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে কুল (বরই) চাষ করে ভাগ্য বদলে গেছে কৃষক গিয়াস উদ্দিনের।

৩ বিঘা জমির উপরে চারা রোপণের ৮ মাসের মধ্যেই গাছগুলো ফলে ভরপুর হয়ে উঠেছে। বাজারে এই বরইয়ের চাহিদা ও দর ভালো হওয়ায় কৃষক গিয়াস খুবই খুশি। আর কোন দুর্যোগ না আসলে যাবতীয় খরচ বাদে তার বাগান থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হবে বলে জানান তিনি।

থাইল্যান্ডী, অস্ট্রেলিয়ান বাউকুল বল সুন্দরীসহ তিন জাতের ফল চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। দূূর-দূরান্ত থেকে এক নজর দেখার জন্য আসেন উৎসুক জনতা। তার সহযোগিতায় এলাকায় আরো ৪টি কুল বাগান গড়ে উঠেছে। গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বরই চাষ করছেন একামধু গ্রামের আছির মিয়া, আরমান মিয়া, জরিফ মিয়া ও রাসেল মিয়া।

স্থানীয়রা জানান, কৃষক গিয়াস উদ্দিন বিজিবি সদস্য ছিলেন। চাকুরি শেষে একটি এনজিও সংস্থায় চাকুরি করতেন। সেই সংস্থার প্রজেক্ট শেষ হওয়ায় বিপাকে পড়েন স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ ৫ জনের সংসার নিয়ে। প্রথমে তিনি স্ট্রবেরী চাষ করেন। তবে স্ট্রবেরীতে তেমন লাভ করতে পারেননি। ২০২১ সালে এক বিঘা জমিতে থাইল্যান্ডী ও অস্ট্রেলিয়ান বারি জাতের আপেল কুল চাষ শুরু করেন। ফল চাষ করা তার শখ। তিনি ফল চাষের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে প্রথমে ২শ’টি গাছ রোপণ করেন। প্রথম বছর ১ লাখ টাকা লাভ করতে পারায় তার উৎসাহ বেড়ে যায়। উদ্যোগ আর পরিচর্যা অব্যাহত রাখায় তিনি আজ সফল হয়েছেন। বদলে গেছে তার ভাগ্য। 

এলাকার আনোয়ার হোসেন জানান, একামধু গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে গিয়াস উদ্দিন হাঁড়ভাঙ্গা শ্রম দিয়ে বরইয়ের বাগান গড়ে তুলেছেন। তিনি বাগানে ৩ বিঘা জমিতে বল সুন্দরীসহ তিন জাতের কুলচাষ করেন। মৌসুমী ওই ফল চাষ করে অল্প দিনে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেন। তার এ কাজে ছেলেই সহযোগিতা করে।  

একামধু গ্রামের মকদ্দছ মিয়া জানান, ২০২১ সালে গিয়াস উদ্দিন বিভিন্ন জাতের ২শ’ কুল গাছ লাগান। ৮ মাস পরে ফল আসতে শুরু করে। এখন গাছগুলো বড় হয়ে গেছে। এ মৌসুমে গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে কুল। যে দিকে দৃষ্টি যায় শুধু ফল আর ফল চোখে পড়ছে। প্রতি গাছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি করে আপেল কুল ধরেছে। গত একমাস যাবত বাগান থেকে কুল বিক্রি শুরু হয়েছে।

কুল বাগানের কৃষক গিয়াস উদ্দিন জানান, আমি খুব বেশী শ্রম দিয়ে থাকি, সাথে আমার ছেলেও আমাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রতি কেজি কুল ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করি। খুচরা ও পাইকারি বিক্রি চলছে। সিলেট-মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়িরা কিনে নেন। এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকার মতো ফল বিক্রি করেছি। আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে ৪ লাখ টাকার মতো কুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদি তিনি। 
এদিকে, এই ফলটি খেতে স্বাদযুক্ত হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বেশ পরিচিতি লাভ করায় দিন দিন বেড়েছে ক্রেতাদের চাহিদাও।

রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উপজেলার অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ করে বেশ সফলতা পেয়েছেন। এরমধ্যে কৃষক গিয়াস উদ্দিন একজন সফল কৃষক। নতুন জাতের এই কুলের চাষ করে তিনি এলাকায় সফল হয়েছেন। কুল চাষে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।